দাসপুরের চেচুয়াতে শহীদদের স্মৃতিফলকে শ্রদ্ধাঞ্জাপন

মেদিনীপুর- ঝাড়গ্রাম

ঘাটাল নিউজ ডেস্ক, ৬ জুন : অগণিত শহীদের আত্ম বলিদান আত্মত্যাগ এবং লড়াইয়েরএর মাধ্যমে এসেছে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা। যে লড়াইয়ের ইতিহাস মর্মর ধ্বনিতে লেখা আছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
এরকমই এক ঘটনা অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার অর্থাৎ এখনের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুরে ঘটেছিল।
১৯৩০ সালের ৬ জুন ব্রিটিশ পুলিশের গুলিতে ১৪ জন স্বাধীনতা সংগ্রামী প্রাণ হারিয়েছিলেন।
তারা দেশের জন্য শহীদ হয়েছিলেন।
সারা দেশ জুড়ে আইন অমান্য আন্দোলন চলাকালে এই ঘটনা ঘটেছিল। লবণ আইন ভেঙে মহাত্মা গান্ধী গুজরাটের ডান্ডি তে আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন, সেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল সারাদেশের সাথে দাসপুরের চেঁচুয়াহাট শহর সংলগ্ন এলাকায়।
আইন অমান্য আন্দোলন চলাকালীন রূপনারায়ন নদীর জোয়ারের নোনা জল থেকে সত্যাগ্রহী রা লবণ তৈরি করেন এবং চেঁচুয়া হাটে বিক্রি করার পরিকল্পনা করেন।
শ্যামগঞ্জে লবণ তৈরি শুরু হয়।
ব্রিটিশ পুলিশ এই আন্দোলনকে বন্ধ করার জন্য সব রকমের দমন-পীড়ন শুরু করে। তা সত্ত্বেও স্বাধীনতা সংগ্রামীরা স্বদেশী সামগ্রী ব্যবহার এবং বিক্রয় করার আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন।
১৯৩০ সালের ৩ জুন দাসপুর থানার বড়বাবু ভোলানাথ ঘোষ, তার সহকারি অনিরুদ্ধ সামন্ত এবং ৪ জন সিপাহি কে নিয়ে হাটে পৌঁছে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে। এর বিরুদ্ধে চুপ করে থাকেন নি মৃগেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য।
মৃগেন্দ্র নাথ ভোলা দারোগার নাম ধরে ডেকে বেঞ্চে তার পাশে বসে পড়েন।
এতে ক্ষিপ্ত ভোলা দারোগা মৃগেন্দ্র নাথ কে বেত দিয়ে মারতে শুরু করে। মৃগেন্দ্র নাথ বেত কেড়ে নিয়ে পাল্টা আঘাত করে ভোলা দারোগাকে।
এরপর উত্তেজিত জনতা ভোলা দারোগাকে মেরে ফেলে তার অর্ধ দগ্ধ দেহ পুকুরের পাড়ে মাটিচাপা দিয়ে কলা গাছ লাগিয়ে দেয় ।
আর ভোলা দারোগার সহকারি অনিরুদ্ধ সামন্তর দেহ খণ্ড খণ্ড করে কেটে স্থানীয় একটি মাঠে ছড়িয়ে দেওয়া হয় ।
বাকি সেপাইরা কোনোক্রমে পালিয়ে যেতে পারে

পরের দিন এই ঘটনার তদন্তে মেদিনীপুর ডিএম মিস্টার পেডি, এডিএম আব্দুল করিম, দাসপুর থানার নতুন দারোগা ঘটনা তদন্ত করতে আসেন। পুলিশ ক্যাম্প বসল।
বেশিরভাগ পুরুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হল ।
আরও পুলিশ আসার খবর পেয়ে গ্রামের মহিলারা শঙ্খ ধ্বনি র মাধ্যমে সেই খবর ছড়িয়ে দেন ।
এরপর সংলগ্ন গ্রামের পুরুষ-নারী নির্বিশেষে নিরস্ত্র মানুষজন চেঁচুয়া হাটের উত্তর পাড়ে সমবেত হন। তাঁরা দাবি তুললেন পুলিশ ক্যাম্প তুলে নেওয়ার এবং অকথ্য অত্যাচার বন্ধ করার।
পুলিশের নির্দেশ অমান্য করে বিক্ষোভকারীরা পলাশপাই খাল অতিক্রমের চেষ্টা করলে গুলি চালায় ব্রিটিশ পুলিশ। বুলেট বিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়েন ১৪, জন আহত হন ১৪৫ জনের বেশি। স্বাধীনতা সংগ্রামীরা গুলিচালনার মধ্যেই এগিয়ে আসতে থাকলে ,কংসাবতী নদী দিয়ে চলে যায় ব্রিটিশ পুলিশ ।এরপর পেডি এবং পুলিশ ইন্সপেক্টর জেনারেল লোম্যান সৈন্য নিয়ে এলাকায় আসেন। স্বদেশীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। বিশেষ আদালত গঠিত হয়। আদালতের রায়ে অনেকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।
১৯৩১ সালের ৫ ই মার্চ গান্ধী আরউইন চুক্তি মোতাবেক তাদের সকলের মুক্তি হয়।
১৪ জন শহীদের সাক্ষ্য বহন করছে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ ।প্রতিবছর ৬ জুন স্বাধীনতা সংগ্রামীদের শ্রদ্ধা জানান দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ।
চির অমর শহীদ এবং স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয় শহীদবেদীতে।

Ghatal News