ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ দীপক অধিকারী তথা দেব বুধবার রাজ্যের সেচ মন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের সাথে বৈঠক করলেন ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে।
জানা গিয়েছে ওই বৈঠকে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান সম্বন্ধে আলোচনা হয় এবং পরবর্তীকালে কি কি পদক্ষেপ নেয়া হবে তার রূপরেখা তৈরি হয়েছে।
তৃতীয়বারের জন্য লোকসভা নির্বাচনে ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্র থেকে ভোটে দাঁড়িয়ে দেব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান এবার রূপায়িত হবে।
ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান এর চ্যাম্পিয়ন হিসাবে তাকে তুলে ধরা হয়েছে।
হুগলিতে জনসভায় নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন রাজ্য সরকার মাস্টারপ্ল্যান রূপায়িত করবে।
দেব প্রথমে ভোটে দাঁড়াতে রাজি ছিলেন না।
পরবর্তীকালে তার সাথে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
মাস্টার প্ল্যান রাজ্য সরকার রূপায়িত করবে এই প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পর তিনি ভোটে দাঁড়ান।।
লোকসভা নির্বাচনে ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্র থেকে দাঁড়িয়ে দেব যে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেগুলি ভোটের ফলাফল প্রকাশের এক সপ্তাহের মধ্যেই রূপায়িত করার কর্মসূচি শুরু করেছেন।।
ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্র জুড়ে তিনি যতগুলি ভোট পেয়েছেন ততগুলি বৃক্ষরোপণ হবে বলেছিলেন।
পরে সব রাজনৈতিক দল যত ভোট পেয়েছে সেই মতো বৃক্ষরোপণ হবে বলে বলেন এবং সেই কর্মসূচি তিনি শুরু করেছেন।।
এরপরে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়িত করার জন্য পদক্ষেপ হিসেবে তিনি সেচ মন্ত্রীর সাথে বৈঠক করলেন।
- বানভাসি ঘাটালে প্রতি বছরই বন্যা হয়।
এর প্রভাব পড়ে কৃষিতে এবং স্থানীয় ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে।
অনেক মানুষ ঘর ছাড়া হন।
আশ্রয় নেন ফ্লাট সেলটারে অথবা অন্য কারোর বাড়ির ছাদে।
থাকে না বিদ্যুৎ, পানীয় জল।
বিচ্ছিন্ন হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
প্রতিবছর বন্যায় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটালের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। শিলাবতী, ঝুমি এবং কংসাবতী নদীর জল বাড়লে এই মহকুমার বিস্তীর্ণ অংশ প্লাবিত হয়।
এছাড়াও পূর্ব মেদনীপুর জেলার পাঁশকুড়ার বিভিন্ন অঞ্চল প্লাবিত হয়।
৩৯ বছর আগে তৈরি হয়েছিল ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের পরিকল্পনা।
যার রুপায়ন এখনো পর্যন্ত হলো না।
নির্বাচন এলে সরকার এবং বিরোধী পক্ষের দোষারোপ চলে মাস্টার প্ল্যান কেন রূপায়িত হলোনা।
পাঁচের দশকে প্রথমবার ঘাটালে বন্যার সমস্যার কথা পার্লামেন্টে বলেন বাম সাংসদ নিকুঞ্জ বিহারী চৌধুরী এবং সেই সময় এই সমস্যা খতিয়ে দেখার জন্য একটি কমিটি গঠিত হয়।
সেই কমিটি সবকিছু খতিয়ে দেখে মাস্টার প্ল্যানের প্রস্তাব দেন।
১৯৫৯ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের মান সিংহ কমিটি বন্যা প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করে।
এরপর ১৯৮৩ সাল ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান প্রকল্পর শিলান্যাস করেন তৎকালীন সেচমন্ত্রী প্রভাস রায়।
১৯৯৩ সালে ঘাটালে তৈরি হয় ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটি।
২০০৯ সালে ঘাটাল মাস্টার প্যান প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন করার সিদ্ধান্ত নেন রাজ্য সরকার
ডিপিআর অর্থাৎ ডিটেল প্রজেক্ট রিপোর্ট তৈরি হয়। ২০১০ সালে গঙ্গা ফ্লাড কন্ট্রোল কমিশনে ডিপিআর জমা দেওয়া হয়।
আরো কিছু তথ্য চেয়ে ডি পি আর ফেরত পাঠিয়ে দেয় কেন্দ্র।
এরপর ২০১৫ সালে কেন্দ্র ওই প্রকল্প রিপোর্টে সবুজ সংকেত দিলেও কাজ এগোয় নি।
প্রাথমিকভাবে প্রকল্প বাজেট ঠিক ছিল ২২০০ কোটি টাকা। পরে গঙ্গা ফ্লাড কন্ট্রোল কমিটির নিয়ন্ত্রণে আসার পর সেই বাজেট হয়েছে ১২৪০ কোটি টাকা।
এই প্রকল্পর ৭৫ ভাগ দেবে কেন্দ্রীয় সরকার এবং বাকি অর্থ দিতে হবে রাজ্য সরকার। পরে এই নিয়মের বদল হয়। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার উভয়েই ৫০ শতাংশ করে খরচ দেবে।
এখন দেখার ঘাটাল মাস্টার প্যান রূপায়নের কাজ কবে শুরু হয়।
আশায় বুক বাঁধছে ঘাটালবাসী।