Site icon Ghatal News

মাস্টারপ্ল্যানের ভুয়ো প্রতিশ্রুতি নয়, রূপায়ন চাই জনগণ

ঘাটাল নিউজ ডেস্ক, ২১ জুনঃ ঘাটালে বন্যা, ভোট, আর মাস্টার প্ল্যান এই তিনটি শব্দ বলা যেতে পারে পিঠোপিঠি। এখানকার বড় অংশের মানুষ মানুষ এই তিনটি শব্দ তে বিরক্তি প্রকাশ করেন।
ঘাটালে যারা পড়াশোনা করেছেন ,ঘাটালে যারা জন্মেছেন ,ছোটবেলা থেকে মাস্টারপ্ল্যান শব্দটা তাদের সাথে পরিচিত ,বলা যেতে পারে সোনার পাথর বাটি হলো এখানকার মাস্টারপ্ল্যান। প্রতিবছর পঞ্চায়েত ভোট থেকে শুরু করে ,লোকসভা ভোট পর্যন্ত এই শব্দটি কে নিয়ে রাজনীতির কারবারিরা দিব্যি খেলা শুরু করেন। ভোট পাখি গান করে, কিন্তু মাস্টারপ্ল্যান আর হয় না। প্রত্যেক রাজনৈতিক নেতারা তাদের ব্যাগ থেকে মাস্টারপ্ল্যান নামক বেড়ালছানাটি বের করে, তারপরে ভোটের পরে সব টাটা বাই বাই।
ঘাটালের ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য ঘাটাল মহকুমাতে প্রায় প্রতি বছর বন্যা হয়।
বলাবাহুল্য এই বছরও যথারীতি বন্যা এসেছে। ঘাটাল প্লাবিত, ঘাটালের মানুষ বন্যা কে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। কৃষিজমি মানুষের ঘর দুয়ার জলের তলায়।
যথারীতি ত্রাণ এবং ত্রাণ নিয়ে রাজনৈতিক অভিযোগ শুরু। আবার সেই মাস্টার প্ল্যান নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে যথারীতি।
সত্যি কথা বলতে সাধারণ ভোটার, রাজনৈতিক নেতাদের এসব কথাগুলো কে আর পাত্তা দেয় না ।
মাস্টার প্ল্যান এর ইতিহাস অনেকেই জানেন ।খুব সংক্ষেপে বলা যেতে পারে, ঘাটালে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনার জন্য সরব হয়েছিলেন ঘাটালের প্রথম সাংসদ নিকুঞ্জ বিহারী চৌধুরী। তিনি এখানকার মানুষের সমস্যাকে সর্বভারতীয় স্তরে তুলে ধরেন। ১৯৫৯ সালে ঘাটাল এবং সংলগ্ন এলাকায় পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু মন্ত্রিসভা কমিটি তৈরি করে এবং সেই কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন অর্থনীতিবীদ মান সিংহ। ১৯৭৯ সালে মানসিংহ কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় সরকার ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান অনুমোদন করে। ১৯৮২ সালে বামফ্রন্টের আমলে মাস্টার প্লান এর শিল্যা নাস হয় ঘাটালে ঢাকঢোল পিটিয়ে। যদিও এখন ওই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পাথরটিতে শ্যাওলা জমে গেছে।
১৯৮২ সালে যখন মাস্টার প্লান এর খরচ ধরা হয়েছিল ৫০কোটি টাকা। এখন শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এর খরচ বেড়ে হয়েছে ১৭৪০ কোটি টাকা।
১৯৮২ সালের ওই পরিকল্পনার জন্য অনুমোদন হয় ৩০ লক্ষ টাকা। ১১৮ কিলোমিটার নদী বাঁধ নির্মাণ হওয়ার কথা ছিল এবং এর ফলে ঘাটাল ,দাসপুর এবং চন্দ্রকোনা, খড়গপুর মেদিনীপুর ,পাঁশকুড়া, ময়না ব্লকের মানুষ উপকৃত হতেন প্রকল্পটি কার্যকরী হলে।
২০০৬ সালে এই প্রকল্পটি নিয়ে আবার নাড়াচাড়া শুরু হল।
৯০০ কোটি টাকার প্রকল্পের খসড়া তৈরি হয় প্রথম ধাপে। ৩৫০ কোটি টাকার কাজের সিদ্ধান্ত হয় তারপর কোনো এক অজানা কারণে তা আবার বন্ধ হয়ে গেল ।২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সংস্থা মাস্টারপ্ল্যানের প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করে।
খরচ বাবদ ১৭৪০ কোটি টাকা ধরা হয়েছিল। তার দু’ভাগে ভাগ করার নির্দেশ ছিল। প্রথম দফায় খরচ ধরা হয় ১২১৪কোটি ৯২ লাখ টাকা। এই প্রকল্পে কেন্দ্র দেওয়ার কথা ৭৫ শতাংশ খরচ বাকিটা রাজ্য র।
এর ফলে দুই মেদিনীপুরের বারোটি ব্লকের প্রায় ১৭ লক্ষ মানুষ উপকৃত হতেন।
২০০৯ সালের কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থার মাস্টারপ্ল্যানের প্রকল্প রিপোর্ট ২০১৫ সালে ছাড়পত্র দেয় গঙ্গা ফ্লাড কন্ট্রোল কমিশন পূর্বাঞ্চল শাখা।
নতুন প্রকল্পে নতুন নিয়ম চালু হলো যে কেন্দ্র এবং রাজ্য৫০ ভাগ করে টাকা। নতুন প্রকল্পে ১৪৭ কিলোমিটার নদী এবং নদী বাঁধ সংস্কার ,নারায়নী এবং কাঁকি খালে দুটি স্লুইসগেট নির্মাণ,পাম্প হাউস, ঘাটাল সংলগ্ন শিলাবতি নদী র ধারে দুই কিলোমিটার গার্ডওয়াল, চারটি বড় সেতু , নদীর নাব্যতা বাড়ানো, ইত্যাদি বিভিন্ন পরিকল্পনা ছিল।
কিন্তু এখনো টাকা বরাদ্দ হয়নি। ২০১১ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি ঘাটাল মহকুমা বন্যা এবং ভাঙ্গন প্রতিরোধ কমিটি তৈরি হয়। এরপর তৈরি হয় ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রুপায়ন সংগ্রাম কমিটি।
এই কমিটি মাস্টারপ্ল্যান রূপায়নের জন্য কাজ শুরুর দাবিতে, অর্থ বরাদ্দের দাবিতে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছে ।কিন্তু এখনো পর্যন্ত এই মাস্টারপ্ল্যান নামক বস্তুটি মানে প্রকল্পটি বাস্তবতার রূপ দেখলো না।
ঘাটালের মানুষ আশা করেছিলেন সাংসদ অভিনেতা দেব জোরালো দাবি করবেন লোকসভাতে কিন্তু সেরকম কোনো জোরালো পদক্ষেপ তাঁর পক্ষ থেকে দেখা যায়নি। আর মানস বাবু অর্থাৎ মানস ভুঁইয়া তিনি তার এলাকার বিষয় নিয়ে যতটা আন্তরিক মাস্টারপ্ল্যানের ব্যাপারে ততটা নয়।
মাস্টার প্ল্যানের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বেশি দেখে কোন লাভ নেই, কারণ মানুষ কাজ চায়, প্রতিশ্রুতি চায় না।
ঘাটালের মানুষ চায় মাস্টার প্ল্যান নিয়ে রাজনীতি বন্ধ হোক। আর প্রত্যেক বছর ভোটব্যাংকে পাঁচ বছরের রেকারিং ডিপোজিট এর মত রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিশ্রুতি গুলো আরো বেশি না বাড়িয়ে ,মাস্টারপ্ল্যান রূপায়িত হোক।
ঘাটালের কৃষক, সাধারণ মানুষ ,গরিব মানুষ বন্যার কবল থেকে রক্ষা পাক।

Ghatal News
Exit mobile version