‘ফনী ‘ মোকাবিলায় রাজনীতি নয় : মুখ্যমন্ত্রী

আমার ঘাটাল রাজ্য

‘ ফনী ‘ মোকাবিলায় রাজনীতি নয় , মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সকলকে একহয়ে কাজ করার আবেদন জানালেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি | নির্বাচনী কর্মসূচিতে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার বিকেলেই তিনি চলে আসেন পশ্চিম মেদিনীপুরে | শুক্রবার আরামবাগ লোকসভার তৃণমূল প্রার্থী অপরূপা পোদ্দার ও ঘাটালের তৃণমূল প্রার্থী দেব ওরফে দীপক অধিকারীর সম্মর্থনে ঘাটাল ও চন্দ্রকোনার মাঝে ক্ষেত্ৰপালের মাঠে তাঁর নির্বাচনী সভা করার কথা ছিল | বৃহস্পতিবার রাতেও জানিয়ে দেওয়া হয় মুখ্যমন্ত্রীর সেই সভা হচ্ছে | সকাল সাড়ে নটার সময় তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি সংবাদ মাধ্যমকে জানান , প্রবল দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির জন্য মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের সভা বাতিল করা হয়েছে | ৪ মে দাঁতনে যে সভা হওয়ার কথা ছিল তা স্থগিত করা হয়েছে | সভাগুলির পরবর্তী দিন পরে জানানো হবে |
সভা বাতিল করলেও মুখ্যমন্ত্রী বসে থাকেননি | বৃহস্পতিবার রাত থেকেই তিনি খড়্গপুরের যেখানে থাকছেন সেই গ্রিন ল্যান্ড হোটেলে কন্ট্রোল রুম খুলে বসেন | এই জায়গাটিকে বেছে নেওয়ার কারন , এখান থেকে পূর্ব মেদিনীপুর , পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম এই তিন জেলার পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা যাবে |
শুক্রবার সকাল থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর চোখ ছিল টিভির পর্দায় | যখন দেখছেন ফেনীর তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে যাচ্ছে পুরী সঙ্গে সঙ্গে জরুরি বৈঠেকে বসেন আধিকারিকদের সঙ্গে | হোটেলের বারান্দায় মুখ বাড়িয়ে দেখে নেন আকাশের মেঘ ঘন কালো | যেন মনে হবে রাত ঘনিয়ে আসছে | রাস্তার দিকে মুখ বাড়িয়ে দেখেন মানুষজন , যানবাহন চলাচল করছে কিনা , যদিও ফেনীর আতঙ্কে এদিন সকাল থেকেই রাস্তায় মানুষজনের ও যানবাহনের যাতায়ত ছিল কম |

ফনীর মোকাবিলায় এবং দুর্যোগের খবর জানতে এদিন সকাল থেকেই নিজের নির্বাচনী কর্মসূচি বাতিল করে খড়্গপুরের একটি হোটেলে কন্ট্রোল রুম খুলে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি | পূর্ব মেদিনীপুর , পশ্চিম মেদিনীপুর , ঝাড়গ্রামে ঝড় বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতির খবর নেন | রাজ্য জুড়ে খবর নেন | পরিস্থিতির ওপর নজর রাখেন | যোগাযোগ রেখে চলেন নবান্নে থাকা রাজ্যের মুখ্যসচিব ও বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের সঙ্গে এবং কলকাতার পরিস্থিতি জানতে বারবার খোঁজ নেন পুরমন্ত্রী ও মেয়র ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে |
টেলিফোনে কথা বলেন পূর্ব মেদিনীপুর , পশ্চিম মেদিনীপুর , ঝাড়গ্রামের জেলা শাসক , পুলিশ সুপার ও জেলা পরিষদের সভাধিপতিদের সঙ্গে | তাঁদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে বলেন , সবসময় পরিস্থিতির দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে | যেকোনো মুহূর্তে যা কিছু ঘটতে পারে | এনডিআরএফ টিম কোথায় , তাঁরা মানুষজনকে বিপদসঙ্কুল স্থান , উপকূল থেকে সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে গিয়েছে কিনা তাও খোঁজ নেন | বিপজ্জনক বাড়ি থেকে মানুষজনেক সরানো হয়েছে কিনা , বিদ্যুৎ খুঁটির সামনে যাতে কেউ না থাকেন , যাঁদের বাড়ির ওপর গাছ রয়েছে তাঁদের যদি মাটির বাড়ি হয় তাঁদের যেন সেখান থেকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় | ঝড়ে যাঁদের বাড়ি ভেঙেছে তাঁদের যাতে অবিলম্বে ত্রাণ দেওয়া হয় এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয় তা দেখতে বলেন জেলা শাসক ও সভাধিপতিদের | এভাবেই শুক্রবার সারাদিন মানবিক ভাবে দুর্যোগ মোকাবিলা করতে দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রীকে |

এদিকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাপরিষদের কাছে বিকেল পর্যন্ত পাওয়া হিসেবে ধরা পড়েছে – জেলার দাঁতন -২ ব্লকে ২৫ টি বাড়ি ভেঙ্গেছে, খড়্গপুর- ২ ব্লকে ভেঙ্গেছে ৪৭ টি বাড়ি,খড়্গপুর- ১ ব্লকে ১৪ টি,মেদিনীপুর শহরে ৫১ টি,মেদিনীপুর সদর ব্লকে ১৪ টি ,নারায়নগড়ে ৫টি,শালবনীতে ৯টি, গড়বেতা -৩ ব্লকে তথা চন্দ্রকোনা রোডে ২০ টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৷ মোট ১৮৫ টি বাড়ি ভেঙ্গেছে প্রাক ফণী ঝড়েই ৷

Ghatal News

Leave a Reply